ফিলিস্তিনপন্থি হওয়ায় মুসলিম রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করল যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুল। শুক্রবার (১৪ মার্চ) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই ঘোষণাটি দেন। খবর এএফপি।

ঘোষণায় রুবিও অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্রদূত ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন। এই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

ইব্রাহিম রাসুল, যিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে আসছেন এবং ইসরায়েলের প্রতি সমালোচনামূলক, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় তরুণ বয়সে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

বিশেষ করে তিনি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন এবং ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে আসছেন। মার্কিন দৃষ্টিকোণে, তার এই অবস্থান ইসরায়েলের প্রতি কঠোর সমালোচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এক্স (সাবেক টুইটার) এ লিখেছেন, রাষ্ট্রদূত রাসুলের ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি আরও বলেন, রাসুলের বক্তব্যের কারণে তাকে আর যুক্তরাষ্ট্রে গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে না।

দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত রাসুল ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে একাধিকবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে কথা বলেছেন। তিনি ইসরায়েলের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সমালোচনা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ আন্দোলন মূলত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদকে আরও শক্তিশালী করে।

এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে, ফিলিস্তিনপন্থি রাজনৈতিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে নতুন এক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে উত্তেজনা এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোভাবের পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে সন্ত্রাসবাদ আইন লঙ্ঘনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য শুক্রবার (১৪ মার্চ) মার্কিন বিচার বিভাগ একটি তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি বিদ্বেষ রোধ করা। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এর বিরুদ্ধে বাকস্বাধীনতার অধিকার বলে যুক্তি দিয়েছে।

গত সপ্তাহে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের প্রধান নেতা মাহমুদ খলিলকে আটক করা হয়েছিল এবং তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, যদিও আদালত তার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করেছে। এর পরেই মার্কিন শিক্ষা বিভাগ ৬০টি স্কুলের বিরুদ্ধে ইহুদি ছাত্রদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়া, ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণভিত্তিক ভর্তির সুযোগ দেওয়ার অভিযোগও তদন্তাধীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top