অপহরণ হওয়া পাকিস্তানি ট্রেনে চলছে অভিযান, ১৫৫ জিম্মি উদ্ধার

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত যাত্রীবাহী ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ১৫৫ জিম্মিকে উদ্ধার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ২৭ সশস্ত্র হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের পুরোপুরি নির্মূল না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেলে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় পৌঁছলে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ট্রেনটির গতিরোধ করে।

ট্রেন থামানোর জন্য তারা রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং চালকের কক্ষে গুলি চালায়, এতে ট্রেনের চালক আহত হন। এরপর হামলাকারীরা ট্রেনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ও যাত্রীদের জিম্মি করে।

ট্রেনটিতে ৯টি বগিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিলেন। হামলাকারীদের সংখ্যা কতজন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।

বুধবার (১২ মার্চ) সকালের দিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, সশস্ত্র ব্যক্তিরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, ফলে অভিযান চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে অভিযান শুরুর পর থেকে ১৫৫ যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ২৭ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

অভিযানে আহত ১৭ যাত্রীকে জরুরি চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, সশস্ত্র ব্যক্তিরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বিদেশি সহায়তাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাদের মধ্যে একজন মাস্টারমাইন্ড রয়েছেন, যিনি আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন।

এছাড়া, সন্ত্রাসীরা ট্রেনে থাকা নারী ও শিশুদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, যা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই অভিযান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।

এ ঘটনায় বেলুচিস্তান সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ জানান, ঘটনাস্থলে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ দল পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া, কোয়েটা ও সিবি শহরের বেসামরিক হাসপাতালগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে হাসপাতালগুলোর কয়েকটি ওয়ার্ড খালি রাখা হয়েছে।

এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পবিত্র রমজান মাসে নিরীহ যাত্রীদের লক্ষ্যবস্তু বানানোই প্রমাণ করে, এই সন্ত্রাসীদের ইসলাম, পাকিস্তান বা বেলুচিস্তানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়া, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্ধাপুর এবং আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) প্রেসিডেন্ট আমাল ওয়ালি খানও এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (পিআইসিএসএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার হার আগের মাসের তুলনায় ৪২% বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানে সহিংসতা ক্রমাগত বাড়ছে, যা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলছে এবং পুরো ট্রেন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top