গাজাকে কি সত্যিই সিঙ্গাপুর বানাবেন ট্রাম্প?

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা, যা সংঘাত, দারিদ্র্য এবং মানবিক সংকটের দীর্ঘ প্রতীক, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নেতার দৃষ্টিতে মধ্যপ্রাচ্যের সিঙ্গাপুরে রূপান্তরিত হতে পারে।

ইসরায়েলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেসের স্বপ্ন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্প্রতি এক বিতর্কিত প্রস্তাব এই ধারণাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে রাজনৈতিক, মানবিক এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ।

শিমন পেরেসের দৃষ্টিভঙ্গি : সম্ভাবনার কথা

শিমন পেরেস গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের সিঙ্গাপুরে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার মতে, গাজার সমুদ্রতীর পর্যটন শিল্পের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময়। সমুদ্রকেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন, বিলাসবহুল হোটেল এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে গাজার অর্থনীতি চাঙ্গা করা সম্ভব। কৃষি খাতেও গাজার ভূমি অত্যন্ত উর্বর, যা স্ট্রবেরি, টমেটোসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানিতে নেতৃত্ব দিতে পারে।

পেরেস বিশ্বাস করতেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এবং ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে গাজার জনগণের জীবনমান উন্নত করা সম্ভব। তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, গাজা শুধু একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল নয়, বরং একদিন এটি একটি অর্থনৈতিক মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা : ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন

ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের নামে একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা উত্থাপন করেছেন। তিনি প্রস্তাব দেন, গাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে আশপাশের আরব দেশগুলোতে পুনর্বাসন করা হবে। একই সঙ্গে গাজার পুরো অবকাঠামো ভেঙে সেখানে নতুন করে একটি আধুনিক এলাকা তৈরি করার কথা বলেন।

ট্রাম্পের মতে, গাজার বর্তমান ধ্বংসস্তূপকে উন্নত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পর্যটন, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি খাতে এটি মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সম্ভাবনার কেন্দ্র হয়ে উঠবে। তবে তার এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের সম্মতি এবং অধিকার রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত বলে মনে করছেন সমালোচকরা।

কুশনারের ভূমিকা ও বিতর্ক

ট্রাম্পের জামাতা ও সাবেক উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার গাজা উপত্যকাকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম ধ্বংসস্তূপ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এই অঞ্চলটি উন্নয়নের জন্য চমৎকার সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে তার পরিকল্পনায় গাজার জনগণের জন্য মৌলিক অধিকার এবং তাদের দুর্ভোগ লাঘবের চেয়ে অবকাঠামো প্রকল্পে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

ট্রাম্প ও কুশনারের পরিকল্পনায় আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনে সহযোগিতা করবে বলে আশা করা হয়েছিল। তবে জর্ডান এবং মিশরের মতো দেশগুলো এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আর কোনো শরণার্থী গ্রহণ করবেন না।

ফিলিস্তিনি রাজনীতিক মুস্তাফা বারঘুতি এই পরিকল্পনাকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় গণহত্যার মাধ্যমে যা অর্জন করা সম্ভব হয়নি, তা রাজনৈতিক চাপ দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’

উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকাকে সিঙ্গাপুরে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন হয়তো আকর্ষণীয়, তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আন্তরিক সহযোগিতা এবং মানবিক সংকটের সমাধান। শান্তি এবং বিশ্বাস স্থাপন ছাড়া এই পরিকল্পনা কেবলই একটি কল্পনা হয়ে থাকবে। গাজার জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হলে প্রথমে তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার রক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top