গরুর মাংস ছেড়ে মুরগিতে ঝুঁকছে মেসির দেশ

লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে গরুর মাংসের পরিবর্তে মুরগির মাংসের দিকে ঝুঁকছে ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনার সাধারণ মানুষ। গরুর মাংসকে প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটি মূল্যস্ফীতির চাপে ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে।

আর্জেন্টিনার কৃষি উৎপাদন ও বাজার পর্যবেক্ষণ সংস্থা রোসারিও গ্রেইনসের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে দেশটির মানুষ গড়ে ৪৯.৩ কেজি মুরগির মাংস এবং ৪৮.৫ কেজি গরুর মাংস খেয়েছে। ইতিহাসে এই প্রথমবার মুরগির মাংসের চাহিদা গরুর মাংসকে ছাড়িয়ে গেছে।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়

২০২৪ সালে আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতির হার ১০০ শতাংশ অতিক্রম করে, যা দেশটির জন্য এক রেকর্ড। এই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই কঠোর আর্থিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন। এর মধ্যে সরকারি ভাতা, পেনশন প্রকল্প, ও আর্থিক প্রণোদনা বন্ধ এবং কর বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

যদিও এসব পদক্ষেপ অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করেছে, কিন্তু এর ফলে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। অনেকেই তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন।

সাধারণ মানুষের সংগ্রাম

রাজধানী বুয়েন্স এইরেসের বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী আরাসেলি পোরেস জানান, পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তাকে তিনটি চাকরি করতে হচ্ছে। তবুও, প্রতিদিন গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য তার নেই। ‘গরুর মাংস এখন বিলাসিতা হয়ে গেছে। তাই মুরগির মাংস খেয়ে দিন পার করছি,’ বলেন তিনি।

গুরুর মাংস বিক্রেতা ড্যানিয়েল লোপেজের মতে, আর্জেন্টিনায় এক কেজি হাড়ছাড়া গরুর মাংসের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার পেসো (৫ থেকে ৬ ডলার), যা মুরগির মাংসের তুলনায় দ্বিগুণ।

‘মানুষ এখনও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। নিয়মিত বেতন না পাওয়ার কারণে গরুর মাংসের মতো খাবার সাধারণ মানুষের জন্য এখন বিলাসী পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে,’ জানান লোপেজ।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী খাদ্য গরুর মাংস ও আলুসেদ্ধ বা গমের রুটির মেন্যুতে মুরগির মাংস যুক্ত হওয়া এ দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সাধারণ মানুষ কেবল সস্তা খাবারের দিকে ঝুঁকছেন।

এ সংকট আর্জেন্টিনার অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি উন্নত হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top