একদিনে উত্তর গাজায় ফিরলেন ৩ লাখ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১৫ মাসব্যাপী ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র দুই দিনের মাথায় গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে এসেছেন ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) গাজার জনসংযোগ দপ্তর এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। খবর এএফপি।

বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের কারণে উত্তর গাজার বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ এতদিন উপত্যকার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অবশেষে ৪৭০ দিন পর তারা নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে আসছেন।

ধ্বংসস্তূপে ফেরা মানুষের উচ্ছ্বাস

ইসরায়েলি বোমা হামলায় উত্তর গাজার বেশিরভাগ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। তবুও নিজেদের এলাকায় ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা। সোমবার সকাল থেকেই নেৎজারিম করিডোর দিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ঘরে ফিরতে শুরু করেন।

অনেকেই ঘোড়া বা গাধার গাড়িতে তাদের সামান্য মালপত্র নিয়ে ফিরেছেন। গাজা সিটির প্রধান সড়কের একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে টাঙানো ছিল ‘গাজায় স্বাগতম’ লেখা একটি ব্যানার।

২২ বছর বয়সী লামিস আল ইওয়াদি নামের এক তরুণী দীর্ঘদিন পর নিজ এলাকায় ফিরে বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। এতদিন মনে হয়েছিল আমি মৃত। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আমি আবার জীবিত হয়েছি।’

ধ্বংসস্তূপ ঘিরে হতাশ না হয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘আমরা আমাদের ঘরবাড়ি আবার তৈরি করব। এমনকি যদি বালি আর কাদামাটি দিয়েও করতে হয়, তবুও।’

প্রয়োজন ১ লাখ ৩৫ হাজার তাঁবু

হামাসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় ফিরে আসা ফিলিস্তিনিদের জন্য সাময়িক আশ্রয় হিসেবে অন্তত ১ লাখ ৩৫ হাজার তাঁবুর প্রয়োজন।

দীর্ঘ যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি

২০২৩ সালের ৭ আগস্ট ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে ১৫ মাসে নিহত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি। পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাধ্য হয়েছেন।

কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় যুদ্ধবিরতি

যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পর থেকেই বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা তাদের ঘরে ফেরা শুরু করেছেন।

ধ্বংসের ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন করে গাজা উপত্যকা গড়ে তোলার জন্য ফিলিস্তিনিদের এই প্রত্যাবর্তন এক নতুন আশা এবং প্রতিজ্ঞার বার্তা বহন করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top