অপকর্মের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ডিআরইউ চত্বরে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। এতে নারী নির্যাতন-নিপীড়নসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। একই সঙ্গে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এছাড়া সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ইফতার মাহফিলে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি বলতে চাই, উন্নয়নের যেটুকু সম্ভাবনা ছিল, অতীতে দেশ যারা পরিচালনা করেছেন, তারাই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারেননি। রাজনীতির স্লোগান যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে যে, আমার চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়, তাহলে দেশটাই বড় করে দেখার কথা ছিল; কিন্তু বাস্তবে রাজনীতিবিদরা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এর পরিমাণ তুলে ধরতে পারেননি।

জামায়াতের আমির বলেন, রাজনীতি থেকে দেশ বড় হলেও রাজনীতিবিদরা তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করতে বাধা নেই। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশের স্বার্থ।

সাংবাদিকরা সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় রাজনীতিবিদদের অবশ্যই আত্মসমালোচনা করা প্রয়োজন। তার পাশাপাশি গণমাধ্যমে যারা আছেন তাদের বুক টান করে দাঁড়ানো দরকার। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে আপনাদের (সাংবাদিক) ওয়েলকাম করি, আপনারা আমাদের সমালোচনা করবেন নাকি প্রশংসা করবেন- এইটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু সমালোচনা করতে ভুলে যাবেন না। সমালোচনা আপনার ভাষায় করুন। আপনারা সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার যে পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে এ অঙ্গনে এসেছেন, মেহেরবাণী করে সেটা রক্ষা করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের ভালোমন্দ রাজনীতিবিদরা ২৫ ভাগ বহন করে, আমি এটা মনে করি। আর ৫০ ভাগ বহন করে সাংবাদিকরা। সুতরাং আপনারা যদি সঠিক কথা বলেন, তাহলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। সাংবাদিকরা কেনো লেখে না যে, অমুক অমুক ব্যবসায়ীর সঙ্গে অমুক অমুক রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক রয়েছে আছে। কখনো ১৫০০ কোটি টাকা, কখনো ১০০ কোটি টাকার খবর কেন শুনি আমরা? কেন আপনারা এগুলো লেখেন না।

সাগর-রুনি হত্যা মামলার চার্জশিট ১১৬ বার পেছানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা কয়বার এই নিউজ লেখেছেন? শুধুমাত্র যখন চার্জশিট পেছানো হয় তখন ছোট করে নিউজ লেখে দেন। এই যে আছিয়া পুরো দেশটা কাঁদিয়ে বৃহস্পতিবার চলে গেল, আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আছিয়ার সম্পর্কে আপনারা লিখেছেন। খুব ভালো। কিন্তু এ রকম আছিয়া কি আর বাংলাদেশে নাই কিংবা এই আছিয়ার চেয়ে করুণ আর কোনো ঘটনা বাংলাদেশে নাই? এই দেশে কি তনু হত্যা হয় নাই, এদেশে মুনিয়া ধর্ষণ হয় নাই এবং দেশে আরও নারী ধর্ষণ হয় নাই? আপনারা কেন লেখেন না। কারণ আপনাদের সাংবাদিকদের অনেকেই জায়গা মতো বসে আছে। ওখান থেকে অনেকেই অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, সুতরাং লেখা হয় না। লেখা হবে না।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায়- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মাহী বি চৌধুরীসহ সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য রাখেন।

আয়োজনে ডিআরইউর সহ-সভাপতি গাযী আনোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই তুহিন, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক রোজিনা রোজী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজান চৌধুরী, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক বোরহান উদ্দীন, ক্রীড়া সম্পাদক মজিবুর রহমান, অর্থ-সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এমদাদুল হক খান, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ), কল্যাণ সম্পাদক রফিক মৃধা, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জুনায়েদ হোসাইন (জুনায়েদ শিশির), আক্তারুজ্জামান, আমিনুল হক ভূঁইয়া, ফারুক আলম, সুমন চৌধুরী, সলিম উল্ল্যা (এসইউ সেলিম) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top