ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হয়। এরপর অনেক প্রভাবশালী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে অনেক কোটিপতিও ছিলেন। এরপর শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ কারণে ব্যাংক থেকে অনেকেই নিজেদের আমানত তুলে নেন। এতে কমতে থাকে কোটিপতির সংখ্যা।
পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা আবারও ব্যাংকে ফিরতে শুরু করে। বাড়তে থাকে ব্যাংকে আমানত ও কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যাও। এর মধ্যে গত তিন মাসে এক লাফে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ২৫৫।
এসব হিসাবে জমা ছিল ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। সেই অনুযায়ী, তিন মাসে ব্যাংক খাতের হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ২৭৭টি। আর আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি। তিন মাসে আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে যা ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৯৫৪।
কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয় উল্লেখ করে ব্যাংকখাতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই।
ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও বলছেন, এর ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটি টাকার আমানতকারী ছিলেন মাত্র ৫ জন। যা ১৯৭৫ সালে বেড়ে ৪৭ জনে উন্নীত হয়।
পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮। এরপর ১৯৯০ সালে কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪৩। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।
আর ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি ও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬টিতে। এরপর ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬।
পরে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে এবং গত জুনে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪-এ।
তবে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সেই হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে। আর সবশেষ ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১।