পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে দেশের প্রতিটি থানায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাদের তালিকা করা হচ্ছে। সংগঠনটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গতিবিধি, রাজনৈতিক সক্রিয়তা, সামাজিক কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বুঝতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর, বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানা পর্যায়ের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
রোববার (০৯ মার্চ) আজকের পত্রিকা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো ধরনের হামলা-মামলা বা হয়রানি করতে নয়, বরং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে আ.লীগের ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পুলিশের একাধিক সূত্র বলেছে, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে নিষিদ্ধঘোষিত এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দেশের পরিস্থিতির অবনতি করতে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সেই আশঙ্কা থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গতিবিধি অনুসরণ করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও বলছে, সারাদেশের সব থানার নেতাকর্মীদের তালিকা সংগ্রহ করে সদর দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, ছাত্রলীগ একটি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মুখপাত্র) ইনামুল হক সাগর বলেন, যে কোনো মামলার আসামিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা এবং তাদের খোঁজখবর রাখা মামলা তদারকির অংশ। তবে ছাত্রলীগের তালিকার চিঠির বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপাররা বিস্তারিত বলতে পারবেন।
পুলিশের সূত্র বলছে, আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছেন বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া নির্দেশনায় যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে :
প্রত্যেক জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে প্রতি থানায় ফ্যাক্স ও ইমেইলে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এমন একটি চিঠিতে দেখা গেছে, থানা পর্যায়ের সব নেতাকর্মীকে পাঁচটি তথ্য সংগ্রহ করতে থানার ওসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহ বিবরণীর একটি ছকে উপজেলা/থানা ছাত্রলীগের নেতার পূর্ণাঙ্গ নাম ও পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে), রাজনৈতিক পরিচয় ও সংগঠনে অবস্থান, অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের বিবরণ, জিডি বা কোনো মামলা থাকলে তার তথ্য দিতে জরুরি ভিত্তিতে বলা হয়েছে।
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরির অগ্রগতির সম্পর্কে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ এসব সংগঠনের মধ্যে ছাত্রলীগও রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম রেঞ্জের এক পুলিশ সুপার বলেন, সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এ তথ্য সংগ্রহ তাদের হয়রানি করা বা দমন-পীড়নের অংশ নয়, বরং জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে করা হচ্ছে।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের ঘোষণার পর সংগঠনটির পুনর্গঠন বা বিকল্প শক্তি সঞ্চার করার সম্ভাবনা লক্ষ্য করেছে পুলিশ। তাই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পুলিশ আগেভাগেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, রাষ্ট্রের জন্য কেউ হুমকিস্বরূপ মনে হলে পুলিশ তাদের তালিকা করবে, ব্যবস্থা নিবে–এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নির্দিষ্ট কোনো দলের জন্য নয়, দেশের আইনে নিষিদ্ধ যেকোনো সংগঠনের জন্য এটা প্রযোজ্য।