ক্রিকইনফোর চোখে মুশফিকের সেরা ৬ ওয়ানডে ইনিংস

বাংলাদেশ ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিম এক অবিস্মরণীয় নাম। দীর্ঘ ১৯ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য স্মরণীয় ইনিংস। কখনো দলের ভরসার প্রতীক হয়ে, কখনো নায়কোচিত পারফরম্যান্স দিয়ে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন ঐতিহাসিক জয়। ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানো এই ব্যাটারের স্মরণীয় ইনিংসের সংখ্যা। তবে তার মধ্যেও বিখ্যাত ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো বেছে নিয়েছে মুশফিকের ছয়টি সেরা ইনিংস। ফিরে দেখা যাক সে কয়টি—

ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ বিশ্বকাপে চাপ সামলে ম্যাচ জেতানো ইনিংস

মাত্র ১৯ বছর বয়সে ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে মুশফিক নামেন তিন নম্বরে। ১৯২ রানের লক্ষ্যে তামিম ইকবালের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পর দলের হাল ধরেন মুশফিক। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৮৪ রানের জুটি গড়ে নিশ্চিত করেন দলের জয়। ঠান্ডা মাথায় খেলে ৫৬ রানে অপরাজিত থেকে শেষ করেন ম্যাচ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়ের সাক্ষী হয়ে থাকল এই ইনিংস।

শচীনের শততম শতকের দিনে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় (২০১২ এশিয়া কাপ)

ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ, যেখানে শচীন টেন্ডুলকার করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শততম শতক। পুরো দুনিয়া তখন শচীনময়। কিন্তু বাংলাদেশ দলকে বিভ্রান্ত হতে দিলেন না অধিনায়ক মুশফিক। ৬৬ রান দরকার ছিল শেষ আট ওভারে। ২৫ বলে বিধ্বংসী ৪৬ রান করে তিনটি ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে আসেন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ম্যাচ শেষ করার মুহূর্তটি আজও শেরে বাংলার দর্শকদের মনে গেঁথে আছে।

২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত সাপোর্টিং ইনিংস

বাংলাদেশ বিশ্বকাপের নকআউটে যেতে হলে ইংল্যান্ডকে হারাতেই হবে। ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর মাহমুদউল্লাহর পাশে এসে দাঁড়ালেন মুশফিক। দুই ভায়রা ভাইয়ের এই জুটিতে আসে ১৪১ রান। মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরি করলেও মুশফিকের ৭৭ বলে ৮৯ রানের ইনিংসটিও ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে চারটি ক্যাচ নিয়ে দলের ১৫ রানের জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে সিরিজ জেতানো সেঞ্চুরি

বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলার পর দেশে ফিরেই পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই মুশফিক খেলেন বিধ্বংসী ১০৬ রানের ইনিংস, মাত্র ৭৭ বলে। তামিমের সঙ্গে ১৭৮ রানের জুটিতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি। পুরো সিরিজে ৬৫ ও অপরাজিত ৪৯ রান করেও দলের সাফল্যে বড় অবদান রাখেন।

এক হাতে ব্যাটিং করা তামিমকে সঙ্গ দেওয়া ১৪৪ রানের ইনিংস (২০১৮ এশিয়া কাপ)

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ, ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ধ্বংসস্তূপ। তামিম ইকবাল ব্যাটিংয়ের সময় হাতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। এরপর ব্যাটিংয়ে ধসে পড়লেও মুশফিক একাই লড়াই চালিয়ে যান। মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে ১৩১ রানের জুটি গড়ার পর শেষ উইকেটে এক হাতে ব্যাট করতে নামেন তামিম। তামিমকে সঙ্গ দিয়ে মুশফিক ইনিংস শেষ করেন ১৪৪ রানে। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জেতে ১৩৭ রানে।

বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরি (আয়ারল্যান্ড, ২০২৩)

২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে ঝড় তুললেন মুশফিক। ৬০ বলে করেন বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্রুততম ওয়ানডে শতক। শেষ ৭ ওভারে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে নেন রেকর্ডটি। ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হলেও ১৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গেঁথে থাকবে।

মুশফিকের এই ইনিংসগুলো শুধু রান নয়, বরং দলের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়ার গল্প। ওয়ানডেতে তার অভাব পূরণ করা সহজ হবে না, তবে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top