শৈশবের ক্লাবে ফিরতে আলোচনার শেষ ধাপে নেইমার

ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার তার শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরে আসার একেবারে দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন বলে জানিয়েছে ফুটবলের দলবদল বিষয়ক বিশ্বস্ত সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো। সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল থেকে চুক্তি বাতিল করে নেইমার তার ক্যারিয়ারে নতুন মোড় নিতে চান। আল হিলালের কোচ জর্জ জেসুস জানিয়েছেন, নেইমার আর সেই আগের পারফরম্যান্সে ফিরতে পারেননি, যার ফলে তাকে সৌদি প্রো লিগের জন্য নিবন্ধন করা হয়নি এবং তিনি কেবল এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে পারতেন।

এই পরিস্থিতিতে নেইমার তার পরবর্তী গন্তব্য খুঁজছিলেন এবং সব ইঙ্গিত বলছে, তিনি সান্তোসেই ফিরছেন, যেখানে তার পেশাদার ফুটবলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ইএসপিএনের সূত্রমতে, আল হিলালের সঙ্গে তার চুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি, তবে দুই পক্ষ আগামী সপ্তাহে আলোচনায় বসবে। সফলভাবে আলোচনার সমাপ্তি ঘটলে নেইমার সান্তোসের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন, যা পরে আরও এক বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ থাকবে।

নেইমারের সান্তোসে ফেরার বিষয়টি বাস্তবায়িত হলে, তিনি এই সপ্তাহেই ব্রাজিলে ফিরে আসতে পারেন এবং ৫ ফেব্রুয়ারি সান্তোসের হয়ে মাঠে নামার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আল হিলালের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নেইমার প্রায় ৬৫ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। যদিও জানা গেছে, নেইমার এবং তার বাবা, নেইমার সিনিয়র, সান্তোসের একটি বিনিয়োগ তহবিলে অংশগ্রহণ করে কিছুটা অর্থ ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করছেন। তবে, ইএসপিএন ব্রাজিল জানিয়েছে যে নেইমার এখনও আল হিলালের কাছ থেকে পাওনা অর্থ আদায়ের ব্যাপারে আশাবাদী এবং সান্তোসের বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা স্বল্পমেয়াদে কঠিন হতে পারে।

নেইমারের প্রত্যাবর্তনের গুঞ্জনের মধ্যে, শোনা যাচ্ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএস ক্লাব শিকাগো ফায়ার এফসি-তেও তার যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ব্রাজিলে ফিরে জাতীয় দলে নিজের জায়গা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে নেইমার সান্তোসকেই বেছে নিয়েছেন।

৩২ বছর বয়সী নেইমারের আল হিলাল অধ্যায়টি হতাশাজনক ছিল। ২০২৩ সালে পিএসজি থেকে ৯৭.৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সৌদি ক্লাবে যোগ দেওয়ার পর, আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার বাঁ হাঁটুতে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। দীর্ঘ পুনর্বাসনের পর গত অক্টোবরে তিনি মাঠে ফিরলেও আবারও হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন। আল হিলালের হয়ে মাত্র সাতটি ম্যাচে অংশ নিয়ে, একমাত্র গোলটি করেছিলেন এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নাসাজি মাজান্দারানের বিপক্ষে।

তবে, ব্যর্থতার এই অধ্যায় নেইমারের জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলেনি। বার্সেলোনায় ২০১৩-২০১৭ সময়কালে লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে দুর্দান্ত জুটি গড়ে তোলার সুবাদে নেইমার বিশ্ব ফুটবলের শীর্ষ তারকাদের একজন হয়ে ওঠেন। সেসময়ে তিনি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, দুটি লা লিগা এবং তিনটি কোপা দেল রে শিরোপা জিতেছিলেন। পরবর্তীতে পিএসজিতে যোগ দিয়ে ফরাসি লিগ ওয়ানে পাঁচটি লিগ শিরোপাসহ বেশ কয়েকটি ঘরোয়া ট্রফি জিতেছিলেন।

সান্তোসের হয়ে ২০০৯ সালে ক্যারিয়ার শুরু করে ২০১১ সালে কোপা লিবার্তাডোরেস জিতেছিলেন নেইমার। ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে তিনি ১২৮ ম্যাচে ৭৯ গোল করে সেলেসাওয়ের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়েছেন। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতে জাতীয় গৌরবও অর্জন করেন।

এখন দেখার বিষয়, আলোচনার চূড়ান্ত ধাপে নেইমারের সান্তোসে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়িত হয় এবং তিনি তার ক্যারিয়ারকে নতুন মোড় দিতে পারেন কি না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top