ট্রাম্পকে ছাড়াই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে ইউক্রেন?

এতদিন পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্রে নিজ ভূমিতে যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছিল ইউক্রেন। একক দেশ হিসেবে কিয়েভকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে পশ্চিমাদের ভরকেন্দ্র আমেরিকা। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত জেলেনস্কির দেশকে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তবে, বাকি পশ্চিমা দেশগুলোও পিছিয়ে থাকেনি। তারা সবাই মিলে কিয়েভকে দিয়েছে ৬৪ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা।

অর্থ উসুলের কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ইউক্রেনকে এই বিপুল সংখ্যক সহায়তা দেওয়ায় পূর্বসূরি জো-বাইডেনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি বাইডেনকে প্রকাশ্যে স্টুপিড বলতেও পিছপা হননি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসা এই রিপাবলিকান।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর বদলে গেছে আগের সব হিসাব। তিনি ইউক্রেনের জন্য প্রস্তুত করা মার্কিন সামরিক সহযোগিতার চালানগুলো স্থগিত করেছেন। পাশাপাশি ছাড় দিয়ে হলেও ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করতে বাধ্য করতে চাইছেন। তবে ট্রাম্পের এমন প্রস্তাব মানতে চাইছে না কিয়েভ। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠছে—ট্রাম্পকে ছাড়াই যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে পারবে ইউক্রেন?

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে— ডোনাল্ড ট্রাম্প গেল নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করতে শুরু করেছিল ইউক্রেন। কিন্তু ট্রাম্প যে সামরিক সহযোগিতা স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন, তার বড় প্রভাব পড়তে পারে কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্রের মতো হাই ভ্যালিউ উইপন্সে। কারণ, এগুলো যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সরবরাহ করতে পারবে না কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররা।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এমন একজন ঊর্ধ্বতন পশ্চিমা কর্মকর্তা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কিটগুলো ট্রাম্পের অভিষেকের আগেই হাতে পেয়েছে ইউক্রেন। এগুলোই দেশটিকে যুদ্ধের মাঠে টিকে থাকতে সহায়তা করবে। আর ততদিনে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শেষে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হবে।

কিয়েভের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ফেদির ভেনিসলাভস্কি দ্য গার্ডিয়ানকে জানান—মার্কিন সহায়তা ছাড়া প্রায় ৬ মাস যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকতে পারবে ইউক্রেন। তবে, এই সময়টায় বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে দেশটির সেনাদের।

পশ্চিমা ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, ইউক্রেনে পশ্চিমা সহায়তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ও প্রযুক্তিগুলো এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং সেগেুলোর ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এখন প্যাট্রিয়টের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে রুশ বিমান হামলা থেকে কিয়েভের শহর ও কৌশলগত স্থানগুলো রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ইউক্রেনের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াবে যদি ট্রাম্প নজরদারি ডেটা কিয়েভের সাথে শেয়ার না করেন। এটা জেলেনস্কির দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটা ব্যবহার করে রাশিয়ার গ্লিড বোমা হামলার সময় আগেভাগেই তথ্য পেয়ে যায় ইউক্রেন। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে রাশিয়ার গভীরে ঢুকে লক্ষ্যবস্তুতে হামলাও চালিয়ে থাকে কিয়েভ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top