গাজা পুনর্গঠনে মিসরের প্রস্তাব, প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল

ধ্বংসস্তূপ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের জন্য মিসরের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে আরব দেশগুলো। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ মার্চ) অনুষ্ঠিত আরব লীগ সম্মেলনে স্থানীয় সময় এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প হিসেবে এ প্রস্তাবকে গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৫ মার্চ) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিসরের প্রস্তাবের মাধ্যমে গাজা পুনর্গঠনে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে গাজার অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, মানবিক সাহায্য এবং সশস্ত্র সংঘর্ষের অবসান নিয়ে কাজ করার কথা রয়েছে।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি কায়রোতে আয়োজিত সম্মেলনে জানায়, গাজা পুনর্গঠনে মিসরের প্রস্তাবটি আরব নেতাদের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিসরের পরিকল্পনাকে বাস্তবতা বিবর্জিত বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, এই প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ওপর অতিনির্ভরতা প্রকাশ পেয়েছে এবং হামাসকে পুরোপুরি অকার্যকর করার উদ্যোগ নেই।

এর আগে গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি বিতর্কিত প্রস্তাব দেন, যার মধ্যে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা তৈরির পরিকল্পনা ছিল। তবে, এই প্রস্তাবটি সারা বিশ্বে সমালোচনার সম্মুখীন হয়, বিশেষ করে ইসরায়েল ছাড়া বাকিরা এতে তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছিল।

এদিকে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, গাজার শাসনের দায়িত্ব কার কাঁধে পড়বে এবং গাজা পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় অর্থ কিভাবে সংগৃহীত হবে।

সিসি তার প্রস্তাবে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাধীন এবং পেশাদার ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি পরিষদ গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এই পরিষদ হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের চূড়ান্ত অবসানের পরবর্তী সময়ে গাজা উপত্যকার শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

সিসি আরও বলেন, গাজা উপত্যকা শাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর কমিটি গাজার ত্রাণ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবে এবং প্যালেস্টিনিয়ান অথোরিটির (পিএ) হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেবে।

প্রসঙ্গত, গাজা সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ভবিষ্যৎ। ২০০৭ সাল থেকে গাজা পরিচালনা করা এই গোষ্ঠী মিসরের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে।

এছাড়াও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও মিসরের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত এমন একটি পরিকল্পনায় সমর্থন দেওয়া যেখানে লাখ লাখ মানুষকে উচ্ছেদের প্রয়োজন হয় না।

গাজা নিয়ে মিসরের বিকল্প প্রস্তাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গাজা উপত্যকা বর্তমানে বাসযোগ্য অবস্থায় নেই। সেখানে ধ্বংসাবশেষ ও অবিস্ফোরিত যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, গাজার এই বাস্তবতা মিসরের প্রস্তাব তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এজন্য ট্রাম্প তার আগের প্রস্তাবে অনড় থাকবেন। হিউজ নিশ্চিত করেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামাসমুক্ত একটি বাসযোগ্য গাজা দেখতে চান।

এভাবে, গাজা পুনর্গঠনের জন্য মিসরের প্রস্তাব যখন আরব বিশ্ব দ্বারা সমর্থিত হচ্ছে, তখন ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বর্তমানে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের রাজনৈতিক আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্ক চলছে, যার ফলাফল শিগগিরই স্পষ্ট হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top