ট্রাম্পীয় নীতি: সামনে আর কী অপেক্ষা করছে

বাংলাদেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশের প্রভাবে ইউএসএআইডির অর্থায়নে কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ স্থগিত হয়ে গেছে। এ পদক্ষেপটি এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। এতে বাংলাদেশের নানা উন্নয়ন কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি সম্প্রতি এক চিঠিতে জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে চুক্তি করা প্রকল্পগুলোতে মার্কিন অর্থায়ন বন্ধ রাখা হবে। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যাবে। ইউএসএআইডি-বাংলাদেশের পরিচালক ব্রায়ান অ্যারেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সব কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে এবং অংশীদারদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এ নির্বাহী আদেশের মূল উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা পুনঃমূল্যায়ন করা। ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশে তাদের অর্থনৈতিক সহায়তা যাচাই করতে চাইছে। তারা নিশ্চিত করতে চাইছে, অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে এটি কার্যকরী। 

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী এ সহায়তা স্থগিতের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। তবে এই সহায়তার পরিমাণে পরিবর্তন হতে পারে। 

রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন সহায়তা বন্ধ না হলেও এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। তবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের নীতির কারণে তৈরি পোশাকশিল্পে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। কারণ মার্কিন অভিবাসন নীতির পরিবর্তনে অনেকে সংকটে পড়তে পারেন।

এখন পর্যন্ত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্যনিরাপত্তা, পরিবেশ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহায়তা দিয়ে এসেছে। ২০২১ সালে ৫০ কোটি, ২০২২ সালে ৪৭ কোটি, ২০২৩ সালে ৪৯ কোটি ও ২০২৪ সালে ৪৫ কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।

এখন ট্রাম্পের নতুন নির্দেশনার ফলে জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রভাব পড়বে। স্বাস্থ্য খাতের পিইপিএফএআর (এইচআইভি/এইডস) কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে এ কর্মসূচি আড়াই কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে সামরিক সহায়তাও বন্ধ হতে পারে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন সামরিক সহায়তাকে সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নির্দেশ দিয়েছেন, যতটুকু সম্ভব আইনের মধ্যে থেকে বিদেশি সহায়তার জন্য নতুন তহবিল দেওয়া হবে না। মানবিক সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এ স্থগিতাদেশ বৈশ্বিক অস্থিরতা ও জীবনহানি বাড়াতে পারে। অক্সফাম আমেরিকার প্রধান অ্যাবি ম্যাক্সম্যান মন্তব্য করেছেন, এতে সংকটে থাকা কমিউনিটির জীবনকে বিপর্যয়কর হবে। 

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৬ হাজার কোটি ডলার বিদেশি সহায়তা খরচ করেছে, যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি হলেও এটি যুক্তরাষ্ট্রের মোট সরকারি ব্যয়ের মাত্র ১ শতাংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের স্থগিতাদেশে  ৯০ দিনের কথা বলা হয়েছে। এটি এক ধরনের রিভিউ পিরিয়ড। পর্যালোচনার পর কোন দেশকে সহায়তা দেওয়া হবে এবং কতটুকু সহায়তা বজায় থাকবে, তা স্পষ্ট হবে। বাংলাদেশে মার্কিন নীতি কী হবে, তা নির্ভর করবে পরবর্তী সময়ে চীন ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top