ইসরায়েল কেন বারবার বিমান হামলা চালাচ্ছে সিরিয়ায়

সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর নগরী তারতুস, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি কোনো সীমান্ত সংযোগ নেই এই বন্দর নগরীর তবুও সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

সোমবার (৩ মার্চ) সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানার বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা সিরিয়ার একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সেনাদের দাবি, সেখানে পূর্ববর্তী সিরিয়ান সরকারের অস্ত্র মজুত ছিল, যা শত্রুপক্ষের হাতে পড়তে পারে।

সিরিয়ার ক্বারদাহ অঞ্চলে অবস্থিত এই সামরিক স্থাপনা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জন্মস্থান, যা তারতুস বন্দরের প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা তারতুস শহরের আশপাশে বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির তথ্য পাওয়া যায়নি।

সানা আরও জানিয়েছে যে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বিশেষজ্ঞ দলগুলো হামলার ক্ষয়ক্ষতি ও টার্গেট নির্ধারণের কাজ করছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অভিযানে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই সিরিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের দাবি, এই হামলাগুলোর উদ্দেশ্য হলো সিরিয়ার সামরিক অস্ত্রশস্ত্র শত্রুপক্ষের হাতে যাওয়া ঠেকানো।

গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ সিরিয়ায় সামরিক স্থাপনার ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে, যেখানে অস্ত্র মজুত ছিল। এর মাত্র কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওই অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আল-আসাদের পতনের পর ইসরায়েল সিরিয়ার জাতিসংঘ-নিয়ন্ত্রিত নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করেছে, যা ১৯৭৪ সালের সিরিয়া-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরায়েল বাফার জোনের বাইরেও কিছু এলাকা, বিশেষ করে মাউন্ট হারমনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং একাধিকবার সিরিয়ার সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে।

গত সপ্তাহে সিরিয়ার জাতীয় সংলাপ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা নেতানিয়াহুর ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসন ও চুক্তি লঙ্ঘন বন্ধ করতে যেন চাপ সৃষ্টি করা হয়।

সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, ইসরায়েল সিরিয়ার সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়ের সুরক্ষা দেওয়ার অজুহাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এই সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ বসবাস করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল সিরিয়ায় নিজের প্রভাব বিস্তার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর সামরিক শক্তি দুর্বল করার লক্ষ্যে হামলা চালাচ্ছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে দেশটি সামরিক অভিযান চালিয়ে তার কৌশলগত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে।

এদিকে, সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং এর মিত্ররা ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top