এয়ার টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধের দাবিতে আটাবের সংবাদ সম্মেলন

এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও এয়ারলাইনস কর্তৃক যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া বাল্ক টিকিট বিক্রি ও মজুতদারি বন্ধ করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল ভিক্টরি, সাংগু হলে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

আটাব সরকার নিবন্ধিত প্রায় ৪০০০ ট্রাভেল এজেন্সির একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। আটাব ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সদস্যদের কল্যাণের পাশাপাশি বাংলাদেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করছে। আটাব-এর লক্ষ্য গঠনতন্ত্র মোতাবেক সব এজেন্সির ব্যবসা করার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, এ সেক্টরের দুর্নীতি দমন এবং এ ব্যবসাকে ব্যবহার করে যেন কোনো মানিলন্ডারিং করতে না পারে তার জন্য যথাযথ নীতিমালা, নির্দেশনা, মনিটরিং ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান অন্যতম বড় সমস্যা এয়ার টিকেটের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি। এ মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ নামবিহীন গ্রুপ টিকিট বুকিং।

কতিপয় মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্স তাদের পছন্দের কিছু সংখ্যক এজেন্সির নামে কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র এবং প্রবাসগামী শ্রমিকদের কোনো প্রকার বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট এমনকি যাত্রী তালিকা ছাড়াই শুধু ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট ২/৩ মাস অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরিপূর্বক সিট ব্লক করে রাখে। এভাবে টিকিট মজুতদারি করা হয় যার ফলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়, আসন সংকট দেখা দেয়, টিকিট মূল্য ২০% থেকে ৫০% কখনও দ্বিগুণ তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং বিদেশগামী শ্রমিক, স্টুডেন্ট, প্রবাসীরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন।

অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ এবং নিম্নলিখিত বিষয়সমূহে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।

১. সিডিউল ফ্লাইট বৃদ্ধি করা, অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দ্রুত অনুমোদন দেওয়া ও ওপেন স্কাই ঘোষণা করা যেন সব দেশের এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহন করতে আগ্রহী হয়।

২. নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ভিসা, ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স ব্যতীত কোনো বুকিং করা যাবে না, সিট ব্লকের মাধ্যমে ফ্লাইটের ইনভেন্টরি ব্লক হয়ে যায়, যে কারণে মূল্য বাড়তে থাকে। এ ছাড়া কোনো ট্রাভেল এজেন্সির কাছে প্রকৃত চাহিদা না থাকলেও এয়ারলাইন্সের কাছে দুই লাইনের একটি ইমেইল করে কৃত্রিম ডিমান্ডের তৈরি করে। কৃত্রিম ডিমান্ডের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে এয়ারলাইন্সের এ পলিসির কারণে। ট্রাভেল এজেন্সিরা তার কাছে ডিমান্ড না থাকা সত্ত্বেও পণ্য মজুত করার মতো এয়ার টিকিট মজুত করছে। এটা বন্ধ করতে হবে।

৩. বর্তমানে ৬০ (ষাট) হাজারেরও অধিক সিট এয়ারলাইন্সসমূহ ব্লক করে রেখেছে। এ সিটগুলো এখনই ওপেন করে দিলে উদ্ভূত সংকট দূর হয়ে যাবে।

৪. বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান না করতে পারলে সমস্যা আরও প্রকট হবে এবং যাত্রীসাধারণ উচ্চমূল্যে টিকেট ক্রয় করতে বাধ্য হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অতি দ্রুত সমাধানের নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।

৫. এয়ারলাইন্স এর ডিস্ট্রিবিউশন পলিসি ওপেন রাখতে হবে। জিডিএস/এনডিসি এ সিট সেল করার নির্দেশনা দিতে হবে এবং সব এজেন্সিকে বিক্রি করার সুযোগ দিতে হবে।

৬. বিভিন্ন রুটে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া বাস্তবসম্মতভাবে নির্ধারণ করা।

৭. এয়ারলাইন্স কর্তৃক হিডেন ফেয়ার এ গ্রুপ টিকেট / প্রাইভেট ফেয়ার এ টিকিট বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশনা।

৮. লেবার ফেয়ার নির্ধারণ করা।

৯. ১০/২০ হাজার সিট/টিকেট দিয়ে দেওয়া হয় কোনো কোনো এজেন্সির কাছে এর মাধ্যমেই সিন্ডিকেটের উৎপত্তি। এজেন্সি প্রতি সর্বোচ্চ সেল সিলিং নির্ধারণ করতে হবে।

১০. শ্রমিক ও ওমরাহ যাত্রীদের এয়ারলাইন্স ফরমেটে টিকিট প্রদান করতে হবে যেখানে ভাড়া, এজেন্সি বিবরণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। প্রকৃত মূল্য যাত্রীর দৃষ্টিতে আসবে এর ফলে নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দাম নিতে পারবে না। মূল্য উল্লেখ ছাড়া টিকেট দেওয়া যাবে না।

১১. জিএসএ কর্তৃক ভাড়া বৃদ্ধি ও কাউন্টার সেল বন্ধ করা।

১২. ১৯৮৪ সালের বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ও বিধিমালা মেনে নিয়ন্ত্রণ করা।

১৩. বাজেট এয়ারলাইন্সগুলো অল্প টাকায় যাত্রী পরিবহন করার ঘোষণা দিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ থেকে তারা লিগ্যাছি ক্যারিয়ারের মতই বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে। বাজেট ক্যারিয়ারসংক্রান্ত বিধিমালা আছে কিনা না? না থাকলে সেটাও তৈরি করতে হবে।

১৪. এয়ারলাইন্স পরিচালনার যে গাইডলাইন আছে সেখানে তাদের সেলস পদ্ধতি এবং মার্কেটিং পলিসি এদেশের জনগণের জন্য কোনো রকমের নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট না করে সেজন্য বিধিমালা প্রস্তুত করা।

১৫. বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আটাব/ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)/ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়/ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)/ বাংলাদেশ ব্যাংক এর সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। তারা চাহিদা, ক্যাপাসিটি ও সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবে, সমাধান করবেন। অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট ও এয়ারলাইন্স স্টাফদের বিরুদ্বে অভিযোগ থাকলে তারা ব্যবস্থা নিবেন। প্রয়োজনে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করবেন।

প্রেস কনফারেন্সে আরও উপস্থিত ছিলেন আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ, সাবেক মহাসচিব জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী দিপু, যুগ্মমহাসচিব আতিকুর রহমান, উপমহাসচিব তোয়াহা চৌধুরী, অর্থসচিব মো. সফিক উল্যাহ্ নান্টু, আটাব কার্যনির্বাহী পরিষদ ও ঢাকা আঞ্চলিক পরিষদ এর সদস্যরা, আটাবের প্রবীণ ও নবীন নেতারা ও বাংলাদেশের গণ্যমাণ্য সংবাদমাধ্যম কর্মীরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top