বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল শিশুটি, নিঃশ্বাস নিতে বিপত্তি

জন্মের পর মাত্র কয়েক সেকেন্ড মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছিল। এরপরই শুরু হয় বাবল বা বুদবুদবন্দি জীবন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই বাবলের ভেতর কেটেছে পুরোটা সময়।

১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া এই শিশুর জীবনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্বকে। শুধু ওই শিশুর জন্যই বিশেষভাবে প্লাস্টিকের বাবল তৈরি করা হয়েছিল। ঘরে কিংবা বাইরে- সব জায়গায় এই বাবলেই বন্দি ছিল শিশুটির জীবন। সিবিএস নিউজসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে।

সিভিয়ার কম্বাইন্ড ইমিউনোডেভেশিয়েন্সি ডিজিজ বা স্কিড নিয়ে জন্ম হয় ডেভিড ভেটারের। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে রোগপ্রতিরোধের কোনো ক্ষমতা থাকে না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এই শিশুটি বেঁচেছিল মাত্র ১২ বছর। তবে পুরোটা সময় তাকে কাটাতে হয়েছে প্লাস্টিকের বুদবুদের ভেতর। এ জন্য পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ডেভিডের নাম দিয়েছিল বয় ইন দ্য বাবল।

হিউসটনের টেক্সাস চিল্ড্রেন্স হসপিটালে জন্ম হয় ডেভিডের। মাত্র ২০ সেকেন্ড মুক্ত বাতাসের স্বাদ পেয়েছে সে। এরপরই একটি প্লাস্টিকের আইসোলেটর বাবলে তাকে রাখা হয়। তবে ডেভিডের জন্মের আগেই ক্যারোল অ্যান ও ডেভিড জে ভেটার দম্পতি তাদের এক ছেলে সন্তান হারিয়েছেন এই রোগে। তাই এই দম্পতিকে চিকিৎসকরা সতর্ক করে দিয়েছিল তাদের পরবর্তী সন্তানও স্কিডে আক্রান্ত হতে পারে।

৬ বছর বয়সে প্রথমবার বাবলের বাইরে দুনিয়ায় পা রাখে ডেভিড। নাসার ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি বিশেষ আইসোলেটর বাবলের কারণে সেটা সম্ভব হয়। ডেভিডের পোশাক দেখতে অনেকটা স্পেসসুটের মতো ছিল। এটা গায়ে দিয়ে সে হাঁটতে এবং বাইরে খেলতে পারত। জটিল এই সুট পরতে মেলা বেগ পোহাতে হতো ডেভিডকে। কিন্তু এই সুটের কারণেই প্রথমবার মা-ছেলে আলিঙ্গন করতে পারে।

ইমিউন ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে পুরোপুরি ম্যাচ হওয়ার বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসার নজির রয়েছে। তবে ১৯৮৩ সালে ডেভিডের বাবা-মা জানতে পারেন, পুরোপুরি ম্যাচ না হলেও বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন করে ছেলেকে বাঁচানো যাবে। তাই ডেভিডের বোন ক্যাথরিন ম্যারো দান করে। এর চার মাস পরই লিম্ফোমা ক্যানসারে মারা যান ডেভিড।

বিরল এই স্কিড রোগে শুধু ছেলে শিশুরাই আক্রান্ত হয়। এখন বুদবুদবন্দি ডেভিডের নামেই এই রোগের চিকিৎসা ও গবেষণায় একটি সেন্টার খোলা হয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা নেওয়ার পর তারা পুরো জীবনকাল জীবিত থাকছে। আর এই চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে ডেভিডের রক্তের কোষ থেকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top