খনিজ নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইউক্রেনের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ৫০ শতাংশ হস্তান্তরের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন, যা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১২ ফেব্রুয়ারি এক গোপন বৈঠকে এ প্রস্তাবটি ইউক্রেনের কাছে পেশ করা হয়, যা বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অস্বাভাবিক চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সব খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে গ্রাফাইট, লিথিয়াম এবং ইউরেনিয়ামের ৫০ শতাংশ মালিকানা দাবি করেছে।

এ বিষয়ে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, এই খনিজ সম্পদগুলো যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেওয়া সহযোগিতার বিনিময়ে চায়। তবে, এ প্রস্তাবের মধ্যে সামরিক এবং আর্থিক সহায়তার বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি।

এছাড়া, ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা এবং এক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন শুধু ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নয়, তেল ও গ্যাসসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদও চেয়েছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, এ প্রস্তাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সম্পদ আহরণ থেকে অর্জিত আয়ের ৫০ শতাংশের অধিকারী হবে, যা বর্তমানে ইউক্রেনের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যানের পেছনে প্রধান কারণ হলো, এতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনো গ্যারান্টি ছিল না। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে এ চুক্তি ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা সরবরাহের কোনো নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।

এক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবটির বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয় এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে একটি পাল্টা প্রস্তাব পেশ করা হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন, এতে নিরাপত্তা গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

ইউক্রেনীয়রা মনে করেন, ১৯৯০-এর দশকে শীতল যুদ্ধের শেষে ইউক্রেনের পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করার সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তা পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি।

এছাড়া, ইউরোপীয় কূটনীতিকরা এ প্রস্তাবকে ঔপনিবেশিক যুগের মতো হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যেখানে শক্তিশালী দেশগুলো ছোট ও দুর্বল দেশগুলোকে শোষণ করতে চেয়েছিল।

উল্লেখ্য, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের তালিকায় রয়েছে ১০৯টি উল্লেখযোগ্য ভাণ্ডার, যার মধ্যে তেল, গ্যাস, টাইটানিয়াম, লিথিয়াম এবং ইউরেনিয়াম রয়েছে। তবে, কিছু খনিজ ভাণ্ডার ইতোমধ্যেই রাশিয়ার দখলে বা যুদ্ধের প্রান্তিক এলাকায় রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top