এবার ট্রাম্পের গাজা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মার্কিন ইহুদিরা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বিতর্কিত প্রস্তাব দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মার্কিন ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতারা।

ট্রাম্পের প্রস্তাব ছিল- গাজা উপত্যকা থেকে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে নিজ ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে এবং ফিরে আসার কোনো অধিকার থাকবে না।

ট্রাম্পের এ প্রস্তাবটি একটি জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ৩৫০ জনেরও বেশি বিশিষ্ট মার্কিন ইহুদি নাগরিক নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একটি পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিজ্ঞাপনটিতে শুধু ধর্মীয় নেতা বা রাব্বিরাই নয়, বরং অনেক ইহুদি সৃজনশীল কর্মী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও স্বাক্ষর করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন টনি কুশনার, ইলানা গ্লাজার, হোয়াকিন ফিনিক্স এবং পিটার বেইনার্টের মতো পরিচিত মুখ। তারা সবাই এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটিতে লেখা ছিল- “ট্রাম্প গাজা থেকে সমস্ত ফিলিস্তিনিদের অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন। ইহুদি জনগণ তীব্রভাবে এই জাতিগত নির্মূলকে ‘না’ বলছে।”

বিজ্ঞাপনটি ছিল স্পষ্ট বার্তা সম্পন্ন, যেখানে বলা হয় যে, ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুত করার এ পরিকল্পনা ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি হবে, যা মানবিক এবং নৈতিকভাবে একেবারে অগ্রহণযোগ্য।

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এই সংকটে এ বিজ্ঞাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল- মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো।

‘ইন আওয়ার নেইম’ ক্যাম্পেইনের পরিচালক কোডি এডগারলি এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের সময়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের বার্তা পরিষ্কার, ফিলিস্তিনিরা একা নয়, আমরা তাদের পাশে আছি এবং গাজায় জাতিগত নির্মূল বন্ধ করতে আমাদের সবকিছু দিয়ে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাব্বি টোবা স্পিৎসার এ ধরনের পরিকল্পনাকে নাজি জার্মানির হিটলারের ‘ইহুদিমুক্ত’ পরিকল্পনার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তিনি বলেন, এটি এক ভয়াবহ পরিকল্পনা, যা ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি হবে এবং আমরা জানি এর পরিণতি কী ধরনের সহিংসতার দিকে যেতে পারে।

এদিকে, ট্রাম্পের এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে শুধু মার্কিন ইহুদিরা নয়, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের নেতারাও সরব হয়েছেন। আরব দেশগুলো, ইউরোপীয় দেশগুলো, এমনকি চীন-রাশিয়াও এর বিরোধিতা করেছে।

তারা বলেছে, ফিলিস্তিনিদের এভাবে তাদের নিজ ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে।

এদিকে ১৯ জানুয়ারি গাজা যুদ্ধবিরতির পর উপত্যকার পরিস্থিতি এমনিতেই অত্যন্ত খারাপ, যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি মানুষের জীবন বিপন্ন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি আক্রমণের কারণে সেখানে খাদ্য, চিকিৎসা এবং অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনীয়তার তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। তাই এ ধরনের পরিকল্পনা গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।

বিশ্বের অনেক দেশ এবং মানবাধিকার সংগঠন মনে করে, এটি শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, বরং সারা পৃথিবীর জন্য একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাদের মতে, এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সহিংসতা এবং অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top