ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মিসরের কায়রোতে অনুষ্ঠিত আলোচনা শেষে হামাস নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির সমাপ্তির হুমকি আপাতত বন্ধ করেছে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি একে একে নতুন সংকটের জন্ম দিতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনার ফলে। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকছে এবং গাজা উপত্যকাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও জোরালো হতে পারে।
ইসরায়েল এবং ইরানের উত্তেজনা
ইসরায়েল এবং ইরান, দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের পটভূমি অনেক পুরনো, তবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এই উত্তেজনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের প্রাথমিক হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে দিলেও, এর ফলে পুরো অঞ্চলে বিশাল আকারের সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পূর্ববর্তী বোমা হামলার প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে এমন ধারণা করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের শত্রু পক্ষগুলোর মধ্যে এই নতুন উত্তেজনা সারা অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে, যার ফলে নতুন যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং শান্তি আলোচনা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানকে পরমাণু অস্ত্র বানানোর সুযোগ দিতে চান না। এদিকে ইরান যদি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে, তবে ট্রাম্প অপেক্ষা করতে রাজি নন। এমন পরিস্থিতিতে, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে, যা পুরো অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি শিগগিরই একটি শান্তিপূর্ণ চুক্তি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তবে ইরান এবং ইসরায়েলকে ঘিরে আরও সংঘাত শুরু হতে পারে।
গাজা পরিস্থিতি ও আরব বিশ্বের উদ্বেগ
গাজা উপত্যকা ইসরায়েলের আক্রমণ এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা নিয়ে আরব লীগ এবং ইরান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রত্যাশিত, তবে এর মধ্যে নতুন সংঘাতের সূত্রপাত হতে পারে।
অবস্থা আরও জটিল হতে পারে
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিগগিরই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া কঠিন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এই অঞ্চলের সংকটের প্রভাব মোকাবিলা করতে না পারে, তবে সংঘাতের সম্ভাবনা আরও বাড়বে এবং শান্তির আশা আরও দূরে সরে যাবে।
সর্বশেষ, গাজা উপত্যকা ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ক উত্তেজনা মিলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরিস্থিতি যদি এমনভাবে চলতে থাকে, তবে আরও সংঘাত এবং অস্থিরতার সৃষ্টি হতে পারে।