খনিজ সম্পদের দখল নিতে ইউক্রেন ধ্বংসের অপেক্ষা করছিল যুক্তরাষ্ট্র?

তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। এরই মধ্যে দু-পক্ষের বহু সেনা নিহত হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ। ইউক্রেনের একটি বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রাশিয়া এবং রুশ সেনাদের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির সাজানো গোছানো শহরগুলো।

বলা হয়ে থাকে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। এমনকি এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলছে সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহের কারণেই। বিগত তিন বছরে ইউক্রেনকে হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র জোগান দিয়েছে ওয়াশিংটন।

জো বাইডেন প্রশাসনের আমলে এই অস্ত্রের জোগানকে বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হিসেবে দেখানো হলেও ডেনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হওয়ার পর সেই খোলস এখন উন্মোচিত। ট্রাম্প ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্রের মূল্য হাজার হাজার কোটি ডলার ফেরত চাইছেন। তিনি ইউক্রেনকে তার খনিজ সম্পদের মাধ্যমে এই বিপুল অর্থ পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্রাম্প তার অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টকে কিয়েভে পাঠিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে এ সংক্রান্ত বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। বেসেন্ট বুধবার ইউক্রেনে পৌঁছৈছেন। ট্রাম্প বলেছেন, বেসেন্টকে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করার চুক্তি স্বাক্ষরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার পর থেকে বিগত তিন বছরে বাইডেন প্রশাসন কিয়েভকে অন্তত ৩০ হাজার কোটি ডলারে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে। ট্রাম্প এখন বলছেন, ইউক্রেনকে ৫০ হাজার কোটি ডলার ফেরত দিতে হবে; যদিও সাহায্য দেওয়ার সময় এমন কোনো শর্ত দেয়নি বিগত বাইডেন প্রশাসন।

ট্রাম্প গতকাল (বুধবার) ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং এ সময় তার ক্ষতিপূরণের দাবি মেনে নিতে কিয়েভ রাজি হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, জেলেনস্কির কাছ থেকে অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট এ সংক্রান্ত লিখিত ডক্যুমেন্ট নিয়ে আসবেন বলে তিনি আশা করছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তার প্রশাসন যদি ইউক্রেনের কাছ থেকে অর্থ ফেরত আনার জন্য লিখিত চুক্তি না করে তাহলে তা বোকামি হিসেবে বিবেচিত হবে। বাইডেন প্রশাসন সে বোকামি করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ট্রাম্প বলেন, বাইডেন প্রশাসন কিয়েভকে ঋণ চুক্তি করে অর্থ বা অস্ত্র দেয়নি। ইউক্রেন থেকে যে কেউ ওয়াশিংটনে এসেছে তার হাতেই অর্থ তুলে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তারা ইউক্রেনকে আহম্মকের মতো অর্থ সরবরাহ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

ইউক্রেন যখন ধ্বংসপ্রায়, যুদ্ধবিরতি বা শান্তি এখনও দৃষ্টিসীমার বাইরে, ইউক্রেনের যখন পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন বন্ধু রাষ্ট্রের সাহায্য ঠিক তখন তার খনিজ সম্পদের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নজর অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি খনিজ সম্পদ দখল করতেই ইউক্রেন ধ্বংসের অপেক্ষা করছিল যুক্তরাষ্ট্র?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top