ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা : ফিলিস্তিনিদের ফিরে যাওয়ার অধিকার নেই

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা কয়েক দিন ধরেই বলছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, তার গাজা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার অধীনে ফিলিস্তিনিদের উপত্যকাটিতে ফেরার কোনো অধিকার থাকবে না।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা

ট্রাম্পের দাবি, গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ তিনি নিজেই নেবেন এবং গাজার বাইরে ফিলিস্তিনিদের বসবাসের জন্য ছয়টি বিকল্প আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। তবে এসব নতুন বাসস্থান কোথায় হবে এবং কীভাবে গড়ে তোলা হবে—সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তিনি দেননি।

সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ফিলিস্তিনিরা গাজায় ফিরে যেতে পারবে না। কারণ, তাদের আরও ভালো থাকার জায়গা দেওয়া হবে। আমি তাদের জন্য একটি স্থায়ী আবাসন গড়ে তোলার কথা বলছি, যা তাদের জন্য বেশি উপযুক্ত হবে। এখন যদি তারা গাজায় ফিরে যায়, তবে কয়েক বছর সময় লাগবে এবং গাজা বর্তমানে বসবাসের উপযোগী নয়।

গাজার ভবিষ্যৎ ‘রিয়েল এস্টেট প্রকল্প’!

ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, গাজা উপত্যকার ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনির জন্য তিনি উন্নত ও নিরাপদ এলাকা গড়ে তুলবেন। গাজা থেকে কিছুটা দূরে এসব আবাসন তৈরি করা হবে এবং এটি হবে নিরাপদ ও আধুনিক।

অপরদিকে গাজা উপত্যকা নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ভবিষ্যতের জন্য গাজা উপত্যকাকে একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্প (আবসন খাত) হিসেবে দেখুন। সমুদ্রের পাশে একটি হবে অনন্য এক সুন্দর এলাকা। ছুটি কাটাতে এটি একটি সুন্দর জায়গা হবে এবং আবাসনখাত নির্মাণে বেশি অর্থও খরচ হবে না।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া : আরব দেশগুলোর প্রত্যাখ্যান

ট্রাম্প প্রথমবার গাজার এই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন চলতি মাসের ৪ ফেব্রুয়ারি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে।

সেখানে তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেন। তবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে মিসর ও জর্ডান উভয় দেশই প্রত্যাখ্যান করেছে। এরইমধ্যে আরব দেশগুলোও ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে সরিয়ে নেওয়ার এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং তা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে।

বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা ফিলিস্তিন সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে। কারণ, ফিলিস্তিনিরা নিজেদের মাতৃভূমি থেকে সরতে রাজি নয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ‘ফেরার অধিকার’-কে ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ‘সম্পূর্ণ অবাস্তব’ ও ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর কৌশল’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার মাধ্যমে গাজা সংকট আরও জটিল রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য কী এবং এটি কতটা বাস্তবসম্মত—সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

তবে ফিলিস্তিনি জনগণের নিজ ভূমিতে ফেরার অধিকারকে অস্বীকার করার এই বক্তব্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top