সেভেন সিস্টার্সের রাজ্য মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং পদত্যাগ করেছেন। আজ রোববার রাজ্যপাল অজয়কুমার ভাল্লার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। গত বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্যের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) তার নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছিল। দলের অভ্যন্তরে ও বাইরে দ্বিমুখী চাপের সম্মুখীন হচ্ছিলেন তিনি।

জানা গেছে, রাজ্য জুড়ে চলা সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়েই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এন বীরেন সিং। প্রায় দুই বছর আগে রাজ্যে যে জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, তা এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই দীর্ঘদিন ধরেই তার পদত্যাগের দাবি তুলে আসছিলেন বিরোধী নেতারা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, রবিবার সকালে নয়াদিল্লিতে অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করেন বীরেন সিং। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি ও নাগা পিপল্‌স ফ্রন্ট (এনপিএফ)-এর ১৪ জন বিধায়ক। মাত্র ১৫ মিনিটের বৈঠকের পর ইম্ফলে ফিরেই বীরেন ইস্তফা দেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, আগামীকাল সোমবার রাজ্যের বিধানসভার সপ্তম অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেখানে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। ফলে সম্ভাব্য অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির এই নেতা।

গত প্রায় দেড় বছর ধরে অশান্ত পরিস্থিতিতে রয়েছে মণিপুর। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রথম মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের সহিংস আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এই রাজ্য। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের বেশ কয়েক জন বিধায়কের বাড়িতেও হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের পাঁচ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবাও। রাজ্যের দুই জাতিগত গোষ্ঠীর এই সংঘাতে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বীরেন সিং আশ্বাস দিয়েছিলেন, ২০২৫ সালে রাজ্যে স্বাভাবিকতা ফেরাবেন তিনি। অথচ সেই আশ্বাসের মাসখানেকের মাথায় পদত্যাগ করলেন এই মুখ্যমন্ত্রী।

পদত্যাগপত্রে বিরেন লিখেছেন, তিনি প্রত্যেক মণিপুরির স্বার্থ রক্ষার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিয়েছেন। উন্নয়নমূলক কাজ ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।

কেন্দ্রকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, হাজার-হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ ও অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো, মাদক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া, দ্রুত সীমান্ত সুরক্ষিত করার মতো বিষয়ের ওপরে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এদিকে কংগ্রেসের দাবি, সবকিছু ধ্বংসের পরে পদত্যাগ করেছেন বীরেন। রাজ্য কংগ্রেস নেতা উদিত রাজ বলেছেন, ‘সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে কোনও লাভ হবে না।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top