পার্লামেন্টে বিরোধীদের তোপের মুখে মোদি সরকার

অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম দফায় সামরিক বিমানে শতাধিক অবৈধ অভিবাসীকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে পার্লামেন্টে সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদি সরকার। এমন পরিস্থিতিতে সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

বৃহস্পতিবার (০৬ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জয়শঙ্কর বলেনে, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো নতুন ঘটনা নয় এবং বেশ কয়েক বছর ধরেই এটি চলছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টে বিষয়ে বিরোধীরা জয়শঙ্করের বিবৃতি দাবি করেন। এরপর তিনি বলেন, প্রতি বছর শত শত ভারতীয়কে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করার বা অবস্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দেশে ফেরত পাঠায়। ২০১২ সালে ৫৩০ জনকে ফেরত এবং ২০১৯ সালে ২০০০ জনের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এর আগে তৃণমূলের এক এমপি কেনো ভারতীয়দের দেশে ফেরত আনতে বিমান পাঠাচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বুধবার (০৫ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধ ভারতীয়দের বিমানে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে একটি সামরিক বিমানে শতাধিক অবৈধ ভারতীয়দের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি সামরিক বিমানে ১০৫ জন অবৈধ ভারতীয়কে নিয়ে অমৃতসরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সি-১৭ সিরিজের এ বিমানটি গতকাল টেক্সাস থেকে উড্ডয়ন করেছে।

সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, বিমানে থাকা সকল ভারতীয় নাগরিকের বিষয়ে যাচাইবাছাই করা হয়েছে। তাদের দেশে ফেরাতে নয়াদিল্লিও সহযোগিতা করেছে। এভাবে একের পর এক ফ্লাইটের মাধ্যমে অবৈধ ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। এর আগে মার্কিন সামরিক বিমানগুলো গুয়াতেমালা, পেরু এবং হন্ডুরাসে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন এমন খবরের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের প্রথম দফায় বহিষ্কার করা হয়েছে। ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি হবে তার প্রথম সফর।

মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ১৮ হাজার ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে। এরই মধ্যে প্রথম দফায় অভিবাসীদের বহনকারী উড়োজাহাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছেড়ে গেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, ক্ষমতায় ফিরলে যুক্তরাষ্ট্রকে অবৈধ অভিবাসীমুক্ত করবেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন এবং এরপরই অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করেন।

তার স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন জনগণকে সুরক্ষা প্রদান’। এই আদেশের আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত ও ফেরত পাঠাতে দেশজুড়ে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় অভিবাসী বসবাস করেন। গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা মেক্সিকোর, এরপর এল সালভাদর ও ভারতের অবস্থান। দেশটিতে বর্তমানে আনুমানিক ৭ লাখ ২৫ হাজার ভারতীয় অভিবাসী নথিবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে নথিবিহীন অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, যারা বৈধ অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের দেশে ফেরত নিতে ভারত প্রস্তুত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top