জামায়াতে ইসলামী প্রতিশোধে বিশ্বাসী না: ডা. শফিকুর

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

আগস্টের ৩-৪ তারিখ সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের নাম পরিচয় এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এখনও হাসপাতালে ২২২ জন পঙ্গুত্ব বরণকারী, ৭০০ জন দুচোখ হারা, একচোখ হারানো আরও ৫০০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই গুম খুন হত্যাসহ ফ্যাসিবাদের বিচার দেশের মাটিতেই হবে।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বালুর মাঠ) জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের একটাই উদ্দেশ্য একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করা। এ কাজের জন্য জামায়াত নেতাকর্মীদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে হবে। জামায়াতকে দেশ গড়ার দায়িত্ব দিলে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমরা (জামায়াত ইসলামী) প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলংকমুক্ত করতে সকল গুম খুনের বিচার হতে হবে। তিনি জামায়াত নেতা কর্মীদেরকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্যও আহ্বান জানান।

জামায়াতের আমির বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের সবগুলো অফিস সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুম খুন নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের নেতাদেরকে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের প্রতি প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত একটি আদর্শবাদী সংগঠন। আমাদের নেতারা বালু মহাল, জলমহাল, হাটবাজার দখলে জড়িয়ে পরে না। তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটপাটে বিশ্বাসী নয়। তার জানে এসব কাজ হারাম। এটাই জামায়াতের নৈতিক শিক্ষা। যে দল বা যারাই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বে জড়াবে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে।

বক্তৃতায় জুলাই বিপ্লবে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদদের স্মরণ করে আমির বলেন, যাদের জীবন দানে আমরা মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে শ্রদ্ধার জায়গায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, একটি দল এদেশের সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে। আবার তাদের দ্বারাই সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। সংখ্যালঘুদের উপর এসকল নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধের জন্য আমি জাতিসংঘে চিঠি লিখেছিলাম নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য। তৎকালীন সরকারকেও একই চিঠি লিখেছিলাম। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করবে আওয়ামী লীগ আর দায় চাপাবে জামায়াতের উপর। এজন্যই তারা তদন্ত করে নাই।

প্রধান অতিথি ডা শফিকুর রহমান ৩০ বছর আগের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার জীবনের প্রথম কর্মস্থল সুনামগঞ্জ। এই জেলার জামালগঞ্জ হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে প্রথম যোগদান করি। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সুনামগঞ্জের মৎস পাথর ধান সারাদেশে যোগান দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, ২০০ বছর আগে বিদেশীরা এদেশে আসত রুজি রোজগারের জন্য। তখনকার শাসকগণ দেশকে ভালবাসতেন। এখন আমাদের বিদেশে যেতে হয় কারণ শাসকদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য দেশ প্রেমিক নেতৃত্বের প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শহীদদের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমাদের নেতাদেরকে যে জল্লাদ ফাঁসি দিয়েছিল সেই জল্লাদের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। যখন আমাদের নেতাদের ফাঁসির সংবাদ দেওয়া হয়, তারা তা শুনে আলহামদুলিল্লাহ বলে দুই রাকাআত নামাজ পড়েন। পরিচ্ছন্ন পরিপাটি কাপড় পড়ে শাহাদাত আঙুলির ইশারায় ফাঁসিকে স্বাগত জানান। শাহাদাতের মর্যাদা পেতে উৎফুল্ল ছিলেন আমাদের নেতারা। আমাদের বাগানের সুন্দর ফুলগুলো দুনিয়ার কারো কাছে মাথা নত না করে হাসতে হাসতে ফাঁসিকে বরণ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সুনামগঞ্জের প্রয়াত সাবেক তিন জেলা আমির আহমদ হোসাইন, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ, হাতিমুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ দেশের ২৩ ভাগ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে। এখানকার বালি পাথর মাছ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তবে সব দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে এই জনপদের মানুষ। দেশে ফ্যাসিবাদী শক্তি যেন আর ফিরে আসতে না পারে সেজন্য তিনি উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার সুনামগঞ্জবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে হাজার হাজার মানুষকে গুম খুন করা হয়েছে। জামায়াতকে রাজাকার জঙ্গিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতাদের ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজ তারা নিজেরাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বর্তমানেও একটি দল চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজিসহ নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে পুরনো কায়দায় জামায়াতের নামে ট্যাগ লাগাতে চায়।

হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে দীর্ঘ দেড় যুগ পর প্রকাশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ জেলা জামায়াতের এই কর্মী সম্মেলন। হাওর অধ্যুষিত এ জেলায় জামায়াতের কর্মী সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top