পদবি বৈষম্য নিরসনে সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মতো পদবি সৃষ্টির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ।
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না করলে ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি এবং প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাগর-রুনী মিলনায়তনে সংগঠনটির সভাপতি আবু নাসির খান এবং মহাসচিব মো. বেল্লাল হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান।
সংগঠনের সভাপতি আবু নাসির খান বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে সরকারি দপ্তরের প্রধান সহকারী, সহকারী, উচ্চমান সহকারী সমপদের পদবি ও বেতন স্কেল এক এবং অভিন্ন ছিল। সচিবালয়ের বর্ণিত পদগুলো প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদবিসহ বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। ফলে সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে পদবি ও বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। সংগঠনের দাবি দাওয়ার প্রেক্ষিতে বৈষম্য নিরসনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পর পর ৩ বার সুপারিশ করা সত্ত্বেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সুপারিশটি বাস্তবায়ন করছে না। দীর্ঘদিন গড়িমসি করে যাচ্ছে।
সংগঠনের মহাসচিব মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন কমিটি ও বিধি অনুবিভাগ গণকর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট এ বৈষম্যটি নিরসনে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের নিয়ে তামাশা করছে। ২০১২ সাল থেকে সংগঠন পক্ষ থেকে পদবি বৈষম্য নিরসনের জন্য আন্দোলন করা হলেও এ বিষয়ে কোনো সমাধান হয়নি।
তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শুধু কমিটি আর প্রতিবেদনের মধ্যে আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দপ্তর থেকে প্রস্তাব পাঠানোর মাধ্যমে পদনাম ও বেতন স্কেল পরিবর্তন করা হবে মর্মে সব দপ্তরের সচিব পর্যায়ে চিঠি পাঠানো হয়। তিনি অভিযোগ করেন যে, এ যাবত ৩১টি অধিদপ্তর থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রেরণ করা হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগ হঠকারী এবং স্ববিরোধী মতামত দিয়ে প্রতিটি প্রস্তাব ফেরত প্রদান করেন। তিনি উল্লেখ করেন ইতোমধ্যে সরকার সমস্কেল ও নিম্ন বেতন স্কেলের কর্মচারীদের মধ্যে ব্লক সুপারভাইজার, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, নার্স, অডিটর, খাদ্য পরিদর্শক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশের এসআইসহ অসংখ্য পদের পদবি ও বেতন স্কেল উন্নীত করা হয়েছে। অথচ অধিদপ্তর, দপ্তর, সংস্থার দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রিধারী এ পদগুলোর পদবি পরিবর্তন না করে সচিবালয়ের সাথে দপ্তর সংস্থার কর্মচারীদের মধ্যে ২৯ বছর যাবত আমলাতান্ত্রিক বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইতঃপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩ বার বৈষম্যটি নিরসনের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি কর্মচারীদের পদবি ও বেতনবৈষম্য নিরসনের জন্য আগামী ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উক্ত সময়ের মধ্যে পদবি ও বেতনবৈষম্য নিরসন না হলে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে দিনব্যাপী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিসহ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা। তৎপরবর্তী সময়ে অধিদপ্তর, দপ্তর, সংস্থার প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অত্র সংগঠনের বিভিন্ন দপ্তরের নেতৃবৃন্দের মধ্যে এনামুল হক মজুমদার, লোকমান আহমেদ, মো. জাকির হোসেন, মোখলেছুর রহমান, রেশমা পারভীন, লুৎফর রহমান, ইসলাম খান, মহসিন মিয়া, জাহিদ হোসেন, রবিউল জোয়াদ্দার, মামুনুর রশীদ, আশিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, নুরুজ্জামান হাওয়াদার প্রমুখ ছাড়াও বহু সংখ্যক সরকারি কর্মচারীর নেতৃবৃন্দ।