কুমিল্লায় যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডার প্রত্যাহার

কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটক এক যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় তদন্তে উচ্চপদস্থ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৩১ জানুয়ারি রাতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা হতে আটক মো. তৌহিদুর রহমান (৪০) বেলা সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

এতে আরও বলা হয়, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনাটি তদন্তে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উক্ত সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়াও মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে কুমিল্লায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হন মো. তৌহিদুল ইসলাম (৪০) নামে এক যুবদল নেতা। এরপর বেলা ১২টার দিকে অসুস্থবোধ করলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পরিবারের অভিযোগ, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। চিকিৎসক এবং স্বজনের মতে, তৌহিদুল ইসলামের শরীরে নির্যাতনের নানা চিহ্ন ছিল।

তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন।

গত রোববার তার বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ছিল তার বাবার কুলখানি। তৌহিদুলের মা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। তৌহিদুলের স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান রয়েছে।

কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল মালিক জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেনাসদস্যরা তৌহিদুল ইসলামকে নেওয়ার নির্দেশ দেন। যখন তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তখন তিনি অচেতন ছিলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তৌহিদুলকে কেন আটক করা হয়েছিল এবং কীভাবে তার মৃত্যু হলো, সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

তৌহিদুল ইসলামের ভাই সাদেকুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে তারা বাবার কুলখানির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাত ২টা ৩০ মিনিটে সেনাসদস্যরা বাড়িতে আসেন। তাদের সঙ্গে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা কেউ ছিল না, তবে পাঁচজন যুবক সাদা পোশাক পরিহিত ছিলেন। বাড়িতে প্রবেশ করেই তারা তৌহিদুলকে আটক করে এবং সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। ঘর তল্লাশি করলেও কিছু পাওয়া যায়নি। তাকে আটক করার কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো উত্তর দেননি। পরে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান।

সাদেকুর রহমান আরও জানান, শুক্রবার সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আবারও বাড়িতে এসে তল্লাশি করেন, কিন্তু কিছু পাননি। তৌহিদুল তখনো গাড়িতে ছিলেন, তবে তাকে নামানো হয়নি। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল তৌহিদুল নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন।

শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top