গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরাতে আবারও ট্রাম্পের প্রস্তাব

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে পাঠানোর কথা আবারও বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মতে, গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর এবং জর্ডানে স্থানান্তরিত করা উচিত।

তিনি দাবি করেছেন, এই দুই দেশ ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করবে, যদিও মিসর ও জর্ডান উভয়ই এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান, মিসর এবং জর্ডান গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করবে।

ট্রাম্প বলেন, আমরা মিসর ও জর্ডান দেশের জন্য অনেক কিছু করি এবং তারা এটি করবে। এর আগেও ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্প গাজা ‘খালি’ করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিলেন। তার মতে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে মিসর বা জর্ডানের মতো ‘নিরাপদ’ স্থানে স্থানান্তর করা উচিত।

তবে এই প্রস্তাবের প্রতি দেশ দুটি বেশ কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গত বুধবার ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা অন্যায়, যা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। একইসঙ্গে, জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহও তার দেশের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমিতে থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমাদের দেশের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে।

গাজা উপত্যকায় বর্তমানে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফও তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ৩০ জানুয়ারি, গাজা পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, গাজার প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ফিরে গিয়ে দেখছে চারপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। এটি সত্যিই বিস্ময়কর যে, সেখানে কতটা ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে।

গাজার বর্তমান অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, তিনি সতর্ক করেছেন যে সেখানে হাঁটাও নিরাপদ নয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক অবিস্ফোরিত বোমা রয়েছে, যা মারাত্মক বিপজ্জনক। উইটকফ জানান, গাজার পুনর্গঠনের জন্য অন্তত ১০ থেকে ১৫ বছরের সময় প্রয়োজন।

এদিকে, মিসর ও জর্ডান গাজার ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের বিষয়টি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর থেকেই উভয় দেশ গাজা এবং পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার কোনো পরিকল্পনা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

মিসর ও জর্ডান দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং এই বিষয়ে তারা তাদের নিজের দেশের নীতির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী নয়।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা এবং ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনাটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষত গাজার মানবিক পরিস্থিতি, যেখানে ইসরায়েলের আক্রমণের পর ঘরবাড়ি ও স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানে ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এরই মধ্যে, মিসর এবং জর্ডান ফিলিস্তিনিদের স্বদেশে থাকার অধিকারের প্রতি দৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছে, যা বিশ্বরাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।

সূত্র : খবর আল-আরাবিয়া নিউজ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top