আইসিটি ডিভিশনের পিডি সাখাওয়াতের তুঘলকি কাণ্ড!

আইসিটি ডিভিশনের অধীনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়িত ‘এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি (ইডিইজি)’ প্রকল্পে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনের নিজের বলয়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যেই বেশিরভাগ কাজ ভাগ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর নিজের লোক হওয়ায় তার ডিও লেটার দিয়ে সাখাওয়াতকে পিডি নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে সাখাওয়াত অনিয়ম দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, ইডিইজি প্রকল্পের পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সরকার পরিবর্তন হলেও তিনি নিজের সিন্ডিকেট বহাল রেখেছেন।

সাখাওয়াত হোসেনের অনিয়ম নিয়ে ইতোপূর্বে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর (ডিপিডি) সাইফুল আলম খান। ফলে তাকে সরিয়ে দিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন সাখাওয়াত।

সাখাওয়াত তার সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে কয়েকজন কর্মকর্তাকে হাতে নেন। সঙ্গে নিজের আত্মীয়দের নিয়োগ দিয়ে পুরো প্রকল্প দখলে নেন। এর মধ্যে রয়েছে তার বিশ্বস্ত সহযোগী একাউন্টস হেড ফয়েজ আহমেদ, সাখাওয়াতের ভাতিজা রাশিক ইসলাম এবং কথিত ফুফাতো বোন পিয়া আক্তার। এই দুই আত্মীয়কে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্পের এক কর্মকর্তা।

এই তিনজনকে নিয়ে গড়ে তোলা বলয়ের মাধ্যমেই সকল টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ দেন।

টেন্ডারে অনিয়ম ছাড়াও প্রকল্পের টাকা অপচয় ও বিলাশী জীবনযাপনেরও অভিযোগ রয়েছে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে। যুগ্ম সচিব হিসেব তার একটি গাড়ি থাকলেও সেই তথ্য গোপন করে প্রকল্পে আরও ২টি গাড়ির বাজেট দেন। সেখান থেকে একটি গাড়ি নিজেই ব্যবহার করছেন।

জানা গেছে, সাখাওয়াত তার কানাডা প্রবাসী পরিবারের জন্য বিপুল পরিমাণ সম্পদ তৈরি করেছেন। ঢাকায় রাকিন প্রপার্টিজের মতো অভিজাত এলাকায় তিনি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন।

প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তখন তারা মন্ত্রী পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করে প্রকল্প পরিচালকের পরিবর্তনের অনুরোধ জানায়। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী পলক শুধুমাত্র ডিপিডিকে সরিয়ে কৌশলে সাখাওয়াতকে রক্ষা করেন।

ইডিইজি প্রকল্পের এসব বিষয়ে নিয়ে অসন্তুষ্ট খোদ বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের কার্যক্রম তদারকি করতে গিয়ে সংস্থাটি এসব অনিয়ম দেখতে পায়। ফলে প্রকল্পের কার্যক্রম সেপ্টেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যেই বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

ইডিইজি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ২০ হাজার দক্ষ পেশাদার তৈরি করা, ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রযুক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ১ হাজার উদ্যোক্তাকে অনুদান প্রদান করার পরিকল্পনা ছিল। তবে প্রকল্পটি অগ্রগতির পরিবর্তে দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তার নাম্বার সরাসরি মোবাইল ফোন ও টিএনটি দিয়ে কল দিলে তিনি কল ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে ও মোবাইলে এসএমএস পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top