সিরিয়ায় আসাদের দল বাথ পার্টি বিলুপ্ত ঘোষণা

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। গত ৮ ডিসেম্বর তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে যান। এর ফলে দেশটিতে তার রাজনৈতিক দল বাথ পার্টির কয়েক দশকের ক্ষমতার অবসান ঘটেছে। এবার তার দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে দেশটির ডি ফ্যাক্টো সরকার।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সংবিধানকে বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল শারা। তিনি আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি নামেও পরিচিত। তাকে অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়ে একটি অস্থায়ী আইন পরিষদ গঠনেরও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নতুন সংবিধান গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত এ পরিষদ তাদের কাজ পরিচালনা করবে।

সানা জানিয়েছে, সিরিয়ার নতুন ডি ফ্যাক্টো সরকারের সামরিক প্রশাসনের মুখপাত্র হাসান আবদেল ঘানি এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানান, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। এসব গোষ্ঠীগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একীভূত করা হবে।

ঘানির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সকল সামরিক গোষ্ঠী বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে। এছাড়া বিলুপ্ত সরকারের সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাসহ স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের দল বাথ পার্টিকেও বিলুপ্ত ঘোষণা করেন তিনি। গত মাসে আসাদ সরকারের পতনের পর রাজধানী দামেস্কে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তার পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটেছে মাত্র ১২ দিনের বিদ্রোহী অভিযানে। বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রযাত্রা এবং সরকারের পতন সিরিয়া এবং পুরো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গত বছরের ২৭ নভেম্বর বিদ্রোহীরা আলেপ্পো শহরে হামলা চালিয়ে তাদের অভিযান শুরু করে। সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি দীর্ঘদিন আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। চার দিনের মধ্যেই বিদ্রোহীরা শহরের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয়।

এরপর গত ১ ডিসেম্বর তারা আলেপ্পোর কিছু কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা বাদে বাকি অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর বিদ্রোহীরা হামা শহরের দিকে অগ্রসর হয় এবং ৫ ডিসেম্বর সিরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহরটিও তাদের দখলে চলে যায়। ৭ ডিসেম্বর বিদ্রোহীরা দামেস্কের দিকে অভিযান শুরু করে।

রাজধানী দামেস্কের দখল ৮ ডিসেম্বর ভোরে বিদ্রোহীরা হোমস শহর দখল করে এবং দামেস্কে প্রবেশের ঘোষণা দেয়। এই সময় আসাদ সরকারের সেনারা বিদ্রোহীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পিছিয়ে যায়। রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ব্যক্তিগত বিমানে করে পালিয়ে যান।

দীর্ঘ শাসনের সমাপ্তি আল-আসাদ পরিবারের শাসন শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে বাশারের বাবা, হাফিজ আল-আসাদের হাত ধরে। প্রায় তিন দশক তিনি প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন। ২০০০ সালে তার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। তার শাসনামলে দেশে আধুনিকীকরণের কিছু প্রচেষ্টা দেখা গেলেও তা শিগগিরই দমন-পীড়ন এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনে রূপ নেয়।

২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছালে বাশারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদ শুরু হয়। শুরুতে তরুণদের বিক্ষোভ হিসেবে যাত্রা শুরু করা আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top