‘সাইবার স্পেস সুরক্ষিত করতে আইনের পাশাপাশি ডিজিটাল লিটারেসি বাড়াতে হবে’

সাইবার স্পেসকে সুরক্ষিত করতে হলে আইনের পাশাপাশি ডিজিটাল লিটারেসি বাড়াতে হবে। এ ছাড়াও শক্তিশালী সাইবার আইনের জন্য সুনির্দিষ্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালা ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নীতিমালা প্রয়োজন। বিদ্যমান আইনে ডিজিটাল প্রমাণ গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা নেই যা বর্তমান ইন্টারনেট গভর্নেন্সের শুভঙ্করের ফাঁকি।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম ২০২৪-এ এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল উর রহমান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের পলিসি অ্যাডভাইজার (আইসিটি কো-অর্ডিনেশন অ্যান্ড রিফর্ম) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এবং জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান।

এতে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু। প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার এবং অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান, এপনিকের ইন্টারনেট রিসোর্স এনালিস্ট সুবহা শামারুখ, ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জায়মা ইসলাম প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম।

প্রকিসিউটর সাইমুম রেজা বলেন, বর্তমানে ইন্টারনেট প্রযুক্তি পরিবর্তন হচ্ছে। ইন্টারনেট গভর্নেন্সের ভিত্তি হতে যাচ্ছে এআই বেইজড মডেল। বর্তমানে দেশের ইন্টারনেট গভর্নেন্সের জন্য এআই নীতিমালা প্রয়োজন। এর সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকা উচিত। সরকার যখন কেনো নীতিমালা তৈরি করবে তখন এর সঙ্গে শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়েও আলোচনা করা উচিত।

প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আইএসপিগুলো নিম্নমানের সেবা দিলে কোথায় অভিযোগ করতে হবে কেউ জানে না। এই সংক্রান্ত সঠিক নীতিমালা নেই। কেউ স্মার্ট হ্যাকিং এর শিকার হলে অভিযোগ জানানোর কোনো আইন নেই। আমাদের আইনে ডিজিটাল প্রমাণ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এদিকে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি।

জায়মা ইসলাম বলেন, আগে ডিজিটাল স্পেসে মানুষের অধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে বৈরিতা তৈরি হতো। প্রথম যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি হয় তখন এই শঙ্কার জায়গাটা তৈরি হয়। সেখানে হ্যাকিংয়ের পাশাপাশি স্পিচকেও মিশিয়ে ফেলা হয়। আমরা সেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মতো কিছু অস্পষ্ট ধারা দেখা গেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ নয়। কিন্তু নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে এই আইনের অধীনে বিচার চাইতে পারে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পূর্ণ ব্যর্থ আইন ছিল। পরবর্তীতে নতুন আইনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইন রাষ্ট্র কর্তৃক আইনের অপব্যবহারের অন্যতম উদাহরণ। তখন দেখা গেল গ্রেপ্তারের হার কমে গেল কিন্তু মামলা দেওয়া হতে থাকল।

অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বর্তমান প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে জামিন অযোগ্য কোনো ধারা নেই। মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় এ বিষয়টি বিচারকের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ২৭ নং ধারা বাতিল করা হয়েছে। শাস্তির পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে। বিচারককে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, আগের আইনে সংক্ষুদ্ধ হয়ে যে কেউ মামলা করতে পারতো। বর্তমান প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে সরাসরি সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি ছাড়া কেউ মামলা করতে পারবে না। এছাড়াও কোনো মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে তদন্তের আগেই তা খারিজ করে দিতে পারবেন ট্রাইবুনাল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top