সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে বাংলাদেশ নাকি মিয়ানমার?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবছর একটি তালিকা প্রকাশ করে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। একটি দেশের সামরিক বাহিনীর আকার, অস্ত্রের মজুদ, প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও জনসংখ্যা সব কিছুই বিবেচনা করে এই তালিকা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালেও বিশ্বের শীর্ষ ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তির র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার।

সম্প্রতি প্রকাশিত এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী মিয়ানমারের নামও। তবে চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত এই র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ অবস্থান করছে মিয়ানমারের উপরে। মোট ৬০টি আলাদা আলাদা বিষয়কে বিচার-বিশ্লেষণ করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমীক্ষকেরা।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, বিশ্বের শীর্ষ ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তির র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫ তম। আর প্রতিবেশী মিয়ানমারের অবস্থান বাংলাদেশের দুই ধাপ নিচে। অর্থাৎ তালিকায় ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে মিয়ানমার। সংস্থাটি বলছে, এই র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে এই সমীক্ষায়।

এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে ‘এশিয়ান মিলিটারি স্ট্রেন্‌থ, ২০২৫’ শীর্ষক আলাদা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাদেশের ৪৫টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১৭তম। আর এশিয়ার এই র‌্যাঙ্কিংয়ে মিয়ানমারের অবস্থান বাংলাদেশের ঠিক পরেই।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী এশিয়ায় সামরিক শক্তিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে রাশিয়া। তবে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। তালিকা অনুযায়ী, এশিয়ায় সামরিক শক্তিতে রাশিয়ার পরেই রয়েছে চীনের অবস্থান। এছাড়া শুরুর দিকে আরও রয়েছে ভারত, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ। পরমানু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান বেশ কিছুটা নিচে। আর বাংলাদেশ রয়েছে ১৭তম অবস্থানে।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট সামরিক বাহিনীর আকার প্রয় ৭ লাখ। এর মধ্যে সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭,৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫,১০০ নৌসেনা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য।

অন্যদিকে মিয়ানমারের মোট সামরিক বাহিনীর আকার ২ লক্ষ ২৫ হাজার। এর মধ্যে সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। মিয়ানমারের বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫০০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬,০০০ নৌসেনা। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ৫৫ হাজার প্যারামিলিটারি ফোর্স রয়েছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের প্যারামিলিটারি ফোর্স বিশ্বের মধ্যে এক নম্বরে। বাংলাদেশের রয়েছে ৬৮লক্ষের বিশাল প্যারামিলিটারি ফোর্স। যুদ্ধ বা রাষ্ট্রের যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে তারা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রয়েছে ৩২০টি যুদ্ধ ট্যাংক এবং ১১,৫৮৪ টি সামরিক যান। রয়েছে ৫৬টি স্ব-চালিত কামান, ৫৪৬টি আর্টিলারি সিস্টেম এবং ১১০টি রকেট সিস্টেম। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রয়েছে ২১৪টি যুদ্ধবিমান। এর মধ্যে ৪২টি ফাইটার বিমান এবং ৮৬টি ট্রেইনি বিমান। এছাড়াও রয়েছে ৬৫টি হেলিকপ্টার। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রয়েছে ১১৮টি নৌযান, ৭টি ফ্রিগেট, ৬টি কার্ভেট এবং ২টি সাবমেরিন।

অন্যদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর রয়েছে ৪৪৫টি যুদ্ধ ট্যাংক এবং ৫,৯৮০ টি সামরিক যান। রয়েছে ৯৫টি স্ব-চালিত কামান, ২১০টি আর্টিলারি সিস্টেম এবং ১৮০টি রকেট সিস্টেম। মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর রয়েছে ৩১৭টি বিমান। এর মধ্যে ৫৮টি ফাইটার বিমান এবং ১১৯টি ট্রেইনি বিমান। মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর ৮৩টি হেলিকপ্টার রয়েছে। দেশটির নৌবাহিনীর হাতে রয়েছে ২৩২টি নৌযান, ৬টি ফ্রিগেট, ৩টি কার্ভেট এবং ৩টি সাবমেরিন।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশের সামরিক বাজের প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। আর মিয়ানমারের সামরিক বাজের প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।

বিভিন্ন সমরাস্ত্রের সংখ্যায় মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ কাছাকাছি অবস্থান করলেও প্রশিক্ষণ এবং যুদ্ধ সক্ষমতায় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অনেকটা এগিয়ে আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দেশের মহড়া এবং প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এমনকি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top